ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮-১৯৫২)

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - জাতীয় চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় | NCTB BOOK

মাতৃভাষার অধিকার গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার । পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জনের মাতৃভাষা ছিল বাংলা; উর্দু কোনো অঞ্চলেরই মাতৃভাষা ছিল না । অথচ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয় । অগণতান্ত্রিকভাবে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বাঙালিদের যে আন্দোলন শুরু হয়, তা-ই ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি-কোনো কিছুরই মিল ছিল না। তবু শুধু ধর্মের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অর্ন্তভূক্ত করা হয়। ফলে পাকিস্তান নামক এই নতুন রাষ্ট্রটির শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে শোষণের প্রথম কৌশলটি গ্রহণ করে ভাষাকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র নেতৃত্বের সমন্বয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তাদের দাবি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা। যে কারণে আমরা দেখি, ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পরিষদের ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি করে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু শুরু থেকেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত ছিল না। কিন্তু ততদিনে পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, অলি আহাদ প্রমূখ নেতৃবৃন্দের মতো যোগ্য, প্রতিবাদী ও অধিকার সচেতন নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে।

Promotion